ঢাকা, সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি, রাত ১:৫৭
বাংলা বাংলা English English

ডেঙ্গুতে রেকর্ড মৃত্যু ঝুঁকিতে দেশ


ফাইল ছবি

ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন শত শত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচণ্ড চাপ বাড়ছে। এতে শয্যা সংকটে অনেকেই চিকিৎসা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন।

এ ছাড়া চিকিৎসায় অবহেলারও অভিযোগ উঠছে। সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে মহামারি আকার নিবে ডেঙ্গু। আর মৃত্যু হবে রেকর্ড সংখ্যক।

এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু। ডেঙ্গু অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। সারা দেশে অকল্পনীয় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। বর্ষার মাঝামাঝি দেশজুড়ে আক্রান্ত-মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশ ডেঙ্গুতে রেকর্ড মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। এ নিয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বুধবার ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে ডেঙ্গু রোগীর চাপে দিশেহারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর জায়গা হচ্ছে না হাসপাতালে। অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার জায়গা নেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সবাই ব্যাপক জ্বর, হাড়ের সন্ধিতে ব্যাথা, বমি ইত্যাদি উপসর্গে ভুগছেন বলে। বুধবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারীদের মারামারি ঘটনাও ঘটেছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকার সব সরকারি হাসপাতালে আরও দেড় হাজার শয্যা (বেড) বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। আগামী সাতদিনের মধ্যে এই অতিরিক্ত বেড প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গুর একমাত্র বাহক এডিস মশা। প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। এই রোগের কোনো টিকা, ওষুধ কিংবা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত চিকিৎসাপদ্ধতি এখনও আবিষ্কার হয়নি।

তবে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরপরই যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করলে এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা ৯০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পায়।

বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবিএম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ডেঙ্গু যত দ্রুত শনাক্ত হয়—রোগীর ভোগান্তিও তত কম হয়। তাই জ্বর হলে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ৬৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া একই সময়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৬ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটির ১ হাজার ৩২৭ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরে ১ হাজার ৩২৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ১৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ৩৪১ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩১ হাজার ৯৩৭ জন। মারা গেছেন ২১৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা সিটির ১৭২ জন এবং ঢাকা সিটির বাইরের ৪৩ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন আর বর্ষা মৌসুমের আতঙ্ক নয়। ফলে এর ভয়াবহতা বাড়ছে। এটি মোকাবিলায় দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও ব্যাপকভাবে সচেতন হতে হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ জুন মাস থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর মে মাস থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে হয়তো রক্ষা পাব, না হলে ডেঙ্গু এবার মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, শক সিন্ড্রোমের কারণে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। তাই অবহেলা না করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী নানা উদ্যোগ নিলেও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশা নিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এরমধ্যে মারা গেছেন ২৮১ জন।

 

সব খবর